২৬শে ফেব্রুয়ারি ভালো আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল এবং সবকিছু অনুকুলে ছিল। এই কারণে, আমি ২৬ তারিখ সামিট করার চেষ্টার ব্যাপারে এডাম বিয়েলিকিকে প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধু এই বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন এবং সেই দিনের চূড়ান্ত প্রচেষ্টার সূচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। উল্টো ক্রিস্টোফ উইলিকির সাথে আমাকে বাদেই এক সপ্তাহ পরে, মার্চ মাসের শুরুতে, সামিটের জন্য কিছু সম্ভাব্য প্রচেষ্টার কথা বলেছিলেন।
আমার বিনম্র মতামত হলো শীতকাল শেষ হয় ২৮ই ফেব্রুয়ারি। তাই এই বছর শীতকালীন কে-২ সামিটের একটাই সম্ভাবনা ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, সঙ্গী না পেলে আমি একই চুড়ায় পৌঁছার চেষ্টা করবো। কারণ আমি জানতাম যে, আমি পুরোপুরি প্রশিক্ষিত এবং পর্যাপ্ত অভিযোজিত ছিলাম। তাই আমি কারো সাথে কথা না বলে একাকী বেসক্যাম্প থেকে বেরিয়ে পরি। আমি সাথে রেডিও নিতে চাইনি। কারণ আমি ভীত ছিলাম যে লোকেরা আমার সাথে আবারো বরাবরের মতোই মিথ্যা বলবে, আমাকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে বিরক্ত করবে। আমি পাহাড়ের বাস্তব শীতকালে, ফেব্রুয়ারী শেষ দিনগুলোতে কে-২ সামিটের একাকী প্রচেষ্টার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এই অভিযান আমার জন্য সত্যিই কঠিন ছিল। কারণ অদ্ভুতভাবে সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে, খারাপ এবং আরো খারাপ হচ্ছিল। এই মৌসুমে আমি অস্বস্তিকর অনুভব করেছি … অভিযানের নেতা সুযোগ পেলেই আমার খারাপ মতামত, আমার খারাপ উদ্দেশ্য, আমার খারাপ কাজ ব্যাখ্যা করতেন এবং তারা আমাকে চাপ দিচ্ছিল, তারা আমাকে উদ্বিগ্ন করছিল। এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য যে যেই ব্যক্তি আমাকে বাধা দেয়, আমাকে থামিয়ে দেয়, সেই একই ব্যক্তি পরে আমাকে অন্য কারণ, ও ব্যাখ্যা প্রদান করে। আমি বুঝতে পারি না যে কিভাবে একই ব্যক্তির এই ধরণের দুটি ভিন্ন রুপ থাকতে পারে।
ছবিঃ ক্রিস্টোফ উইলিকি এবং ডেনিস উরুবকো
আমার মতে, একটি অভিযানের ফলাফল আসতে হবে। এবং সেই ফলাফল হলো চুড়ায় পৌঁছানো। এবং আমি শিখর পৌঁছানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি: আমি দড়ি ঠিক করেছি, আমি তাঁবু স্থাপন করেছি, আমি সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছেছি, আমি দ্রুত অভিযোজিত হয়েছি… কিন্তু প্রত্যেকে মনে করতো এগুলো কোন কাজের কাজ না। সাধারণত কঠিন পরিস্থিতিতে সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হয়। কিন্তু এই অভিযানে আমরা আলাদা ভাবে চেষ্টা করছিলাম। হয়তো আমিই কিছু বুঝতে পারিনি; সম্ভবত তাদের জন্য শিখরে পৌঁছানোর কোন বাস্তব কারণ ছিল না।
উদ্ধার অভিযান আমাদের গতি নষ্ট করেনি। নাঙ্গা পর্বতে শক্তি এবং সময় হারানো সত্ত্বেও আমরা কে-২ তে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে সক্ষম ছিলাম। আমরা সেখানে ভালো কাজ করেছিলাম যা আমাদের অনুপ্রাণিত করছিল এবং এলিজাবেথ রেভলকে উদ্বারের পর আমরা স্কার্দু এবং বেসক্যাম্পে যথেষ্ট বিশ্রাম পেয়েছি। আমি মনে করিনা যে নাঙ্গা পর্বতে উদ্বারাভিযান কে-২ অভিযানের ফলাফলের জন্য কোনোভাবে দায়ী।
আমাদের দলের এখন সিদ্ধান্ত হলো সফলতা ছাড়া বেসক্যাম্প ছেড়ে আসা। আমি মনে করি পাহাড়ের অবস্থার উপর নির্ভর করে না, বরং গ্রূপে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের বিবেচনায় এটি সঠিক সিদ্বান্ত। যেহেতু আমি দেখতে পাচ্ছি যে আবহাওয়ার পূর্বাভাসগুলি ক্ষেত্র বিশেষে অনুকূলে আছে এবং এখনো কাজ করা সম্ভব। যাইহোক, সমস্যা সদস্যদের এবং দলনেতার মানসিকতার মধ্যে, এবং তাদের মধ্যে সম্পর্কের পরিস্থিতি মধ্যে।
অবশ্যই আমি বেসক্যাম্পে আরো দীর্ঘ সময় থাকার কথা ভেবেছিলাম। যখন আমি আমার একক প্রচেষ্টার পর বেসক্যাম্পে ফিরে আসি, তখন আমি উইলিকিকে বলেছিলাম “হ্যালো লিডার, আমি এসে গেছি, সবকিছু ঠিক আছে, আমরা কাজ এগিয়ে নিতে পারি।” তারপর, কয়েক মিনিট পরে, আমি পাসওয়ার্ড পরিবর্তিত দেখে ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্য অনুরোধ করেছিলাম এবং উইলিকি আমাকে বলেছিলেন যে আমার জন্য এটি নিষিদ্ধ, কারণ আমি ভুল জিনিস লিখেছিলাম। তিনি আমাকে একটি ওয়েব পেজের একটা লেখা দেখিয়েছিলেন যা তিনি মনে করেছিলেন যে আমি লিখেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে এটি অন্য কেউ লিখেছে, তাই এর দায়িত্ব আমার নয়। এর আগে আমি বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু কেউ কর্ণপাত না করায় আমি নিজের ব্লগে সম্ভাবনার কথাগুলো ইতিবাচকভাবে লিখেছিলাম। যখন তিনি আমাকে জানালেন যে আমি ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছিনা, তখন আমি অবিলম্বে ট্রেকিংয়ে আসা একটি দল, যারা পরদিন নিচে নেমে যাবার পরিকল্পনা ছিল তাদের সাথে নেমে আসার সিদ্বান্ত নিলাম। আমি দলনেতার কার্যকলাপে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম।
কেউ আমাকে ক্ষমা চাইতে বলেনি, কেউ আমাকে থাকতে বলেনি … যদি কেউ আমাকে বলতো, আমি নিশ্চিতভাবেই তাই করতাম। কে-২ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুখকর লক্ষ্য, এবং এরজন্য এমনকি মার্চ এর শেষ পর্যন্ত আমি থেকে যেতাম। যদিও অভিযানের পূর্বেই শীতকালের ব্যাপারে আমি আমার নিয়ম এবং মতামত ব্যাখ্যা করেছিলাম। আমি পুরো অভিযানেই শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই অভিযানে খারাপ মানসিক সম্পর্ক এবং নেতিবাচকতার সমস্যায় আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
বেসক্যাম্প থেকে ফেরার সময় পাকিস্তানী পর্বতারোহী আমিন উল্লাহ হুনজা ভ্যালি, রাকাপোশি ও স্থানীয় লোকদের অনেক গল্প শুনিয়েছিলেন ও ছবি দেখিয়েছিলেন। বিখ্যাত পর্বতারোহী নাজির সাবির একটু আগেই বললেন রাকাপোশি গত ২০ বছরে সামিট হয়নি। এমন একটি এলাকায় প্রবেশ করা যেখানে যাদের দেখা পাবেন সবাই পর্বতারোহী, আমার জন্য একটি আকর্ষণীয় লক্ষ্য। আমার স্ত্রীও একজন পর্বতারোহী। সে পাকিস্তানে আসতে চায়। তার সাথে মিলে কিছু টেকনিক্যাল পর্বতারোহন প্রজেক্ট নেয়া যায়, বিশেষত: শীতকালে সামিট না হওয়া পর্বতগুলোতে। আমি আবার শীতকালে ব্রডপিক এবং কে-২ অভিযান করতে চাই।
ডেনিস উরুবকো ২০১৭-১৮ সালের শীতকালীন কে-২ অভিযানে শীর্ষ বিন্দু ৭৬৫০ মিটার স্পর্শ করেন এবং এক ফাটলে ৫ মিটার পতন থেকে একাকী উদ্বার পেয়ে ফিরে আসেন। ২০১২-১৩ সালের পোলিশদের কে-২ অভিযানেও তিনি একই উচ্চতা স্পর্শ করেন এবং এবারেররও সহযাত্রী কাস্খানকে বাঁচাতে নেমে আসেন। সেবারও অভিযানের দলনেতা ছিলেন এবারের দলনেতা ক্রিস্টোফ উইলিকি। ২০১৩ সালে পোলিশ অভিযানে ৪ জন বিদেশী অংশ নিয়েছিলেন, যাদের একজন ছিলেন ডেনিস। বাকী ৩ জন উইলিকির সাথে মনোমালিন্যে ফিরে এলেও তিনি ফিরেননি। বলেছিলেন তিনি অভিযানের সাথেই গিয়েছেন এবং দলের সাথেই ফিরবেন। ২০১৫ সালে পোলিশ নাগরিকত্ব পাওয়া ডেনিসকে উইলিকি এই অভিযানে আমন্ত্রণ জানান এবং অভিযানের আগেই জানিয়েছিলেন দলের মধ্যে একমাত্র ডেনিসের উপরই তিনি নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে পারেন। ডেনিসও জানিয়েছিলেন ক্রিস্টোফ উইলিকি তাঁর পর্বতারোহণের আইডল। উরুবকো এই অভিযান নিয়ে বলেছিলেন “ক্রিস্টোফ সবসময় আমার পর্বতারোহণের আইডল ছিলেন এবং আমাদের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযান আয়োজনে তাঁর বেশ ভালো পরিকল্পনা আছে। তিনি অত্যন্ত বুদ্বিমান এবং অভিজ্ঞ। আমি তাঁকে চোখ বন্দ্ব রেখেই বিশ্বাস করি। আমি তাঁকে অনুসরণ করবো এবং তাঁর যেকোন সিদ্বান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত।” এই গুরু-শীষ্যের দ্বন্দ অভিযানের মাঝ পথেই জনসম্মুখে আসে ডেনিসের ব্লগের মাধ্যমে। উইলিকি এই অভিযান থেকে এক একাকী প্রচেষ্টার পর ডেনিস ফিরে আসা নিয়ে বিস্তারিত না বললেও ডেনিস স্কার্দু এবং ইসলামাবাদে সাক্ষাৎকার দেন একাধিক মিডিয়ায়। উপরের লেখাটি বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত সেই আবেগ ও অনুভুতির প্রকাশের মিশ্র সংকলন।