April 17, 2025 9:39 pm
April 17, 2025 9:39 pm

প্রতীক্ষায় কে-২

হারাধনের ১৪ ছেলেরইলো বাকী !”

সত্তরের দশকে হিমালয়ের সুউচ্চ পর্বতমালায় শীতের সাথে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তাতে একে একে হিমালয়ের ১৩টি মুকুট জয় সম্ভব হয়েছে। বাকী আছে শুধুই নাম শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠা, অসংখ্য রুপকথার জন্ম দেয়া ‘কে-২’। প্রথমবারের মতো শীতকালে এভারেস্ট সফলভাবে আরোহন সম্ভব হয় ১৯৮০ সালে। পর্বতারোহনে এই নতুন যুগের সূচনা হয় পোলিশদের হাত ধরেই। ক্রিস্টোফ উইলিকি এবং লেজেক চিছে প্রথমবার শীতকালে পৃথিবীর এই তৃতীয় মেরূতে পৌঁছান, যা ছিল যেকোন আট হাজারী পর্বত শৃঙ্গে প্রথম শীতকালীন সামিট। শুরুটা পোলিশরা করলেও অন্যান্য দেশের অভিযাত্রীরাও পিছিয়ে থাকেননি। ২০১৬ সালেই  নাঙ্গা পর্বত সামিটের পরে পর্বতারোহনের জীবন্ত কিংবদন্তী রেইনহোল্ড মেসনার বলেই ফেলেছেন রাজত্বটা আর পোলিশদের নেইমোরো তা ছিনিয়ে নিয়েছে তারপরও যখনই শীতকালীন পর্বতারোহণের কথা আসবে তখনই চলে আসবে পোলিশ আইস ওয়ারিয়র্সদের কথা।    

এভারেস্টে ১৯৮০ এর সাফল্য পোলিশদের ক্ষুধা যেনো আরো বাড়িয়ে দেয়। তাঁদের দৃষ্টি গিয়ে পরে দ্বিতীয় বৃহৎ পর্বত কে-২ এর দিকে। কে-২ অনেক উত্তরে হওয়ায় এবং ঐদিক থেকে সবচেয়ে উঁচু প্রথম পর্বত হওয়ায় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা সাইবেরিয়ান তুষার ঝড় প্রথম এবং জোরালোভাবে এই পর্বতে আঘাত হানায় শীতে এই ভয়ঙ্কর পর্বত হয়ে উঠে আরো ভয়ংকর। শুধু ইচ্ছাশক্তি বা শারীরিক সামর্থ্য থাকলে তো হবেনা, অভিযানের জন্য প্রয়োজন বিশাল অংকের অর্থায়নের। কে-২ অভিযানের খরচ ছিল ওই সময় পোলিশ অভিযাত্রীদের নাগালের বাইরে। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি যখন দূর্দমণীয় হয় আর্থিক টানাপোড়েন কি কাউকে বেঁধে রাখতে পারে! আন্দ্রেই যাওয়াদা অর্থায়নের জন্য বিভিন্ন দিকে যোগাযোগ করা শুরু করেন। তখনকার সময়ে যেকোন পোলিশ অভিযানের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন এই যাওয়াদা। তিনিই প্রথম শীতকালে ৭০০০ মিটার উর্ধ্ব পর্বত নোশাক সামিট করেন, তিনি প্রথম শীতকালে ৮০০০ মিটার উচ্চতা অতিক্রম করেন (১৯৭৪ সালে লোৎসেতে ৮২৫০ মিটার পর্যন্ত আরোহন করেন)। এছাড়াও এভারেস্ট, চো-ইয়্যু এবং লোৎসের প্রথম শীতকালীন সফল অভিযানের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এসব কারনে শীতকালীন পর্বতারোহনের জনক যাওয়াদার খ্যাতি আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পরেছিল এবং কে-২ অভিযানে অর্থায়নের ব্যাপারে তিনি কানাডা থেকে উৎসাহব্যাঞ্জক সাড়া পান। অর্থায়নের ব্যবস্থা তো হলো, এবার ছিল অভিযানের খুঁটিনাটি পরিকল্পনার পালা। পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ১৯৮৩ সালে যাওয়াদা কানাডার জ্যাক ওলেককে নিয়ে হাজির হয়ে যান পাকিস্তানে।

1987-88

ছবিঃ ১৯৮৭-৮৮ সালের পোলিশ দল (সংগৃহীত)

পাকিস্তানে গিয়ে তাঁরা হতবম্ভ হয়ে যান। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিতে চায়না, যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং সবচেয়ে ভয়ানক ছিল খরচ হবে পূর্বানুমানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু যাওয়াদা হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি দলে কয়েকজন ব্রিটিশ অভিযাত্রীকে অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্বান্ত নেন যাতে পৃষ্ঠপোষকতা  যোগাড়ে সুবিধা হয়। অবশেষে যাওয়াদা এবং তাঁর সঙ্গীর দীর্ঘ ৪ বছরে অনেক ত্যাগের এবং সাধনার মধুরতম ফল হিসেবেই পরিচালিত হয় ১৯৮৭-৮৮ সালের প্রথম শীতকালীন কে-২ অভিযান। সেবার অভিযান হয়েছিল দক্ষিণ দিকের আবরুজ্জী রিজ ধরে। খরচ সংকুলান করতে যাওয়াদা এক বিশাল বহর নিয়ে গিয়েছিলেন যাতে ছিল ২৩ জন পর্বতারোহী (১৩ জন পোলিশ, ৬ জন কানাডিয়ান এবং ৪ জন ব্রিটিশ) এবং একটা ট্রেকিং দল।  মালামাল বহনের খরচ পূর্বানুমানের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। তাই তিনি শীতের আগেই বেসক্যাম্পে মালামাল পৌঁছে দেন। দলটি ডিসেম্বরের শুরুতে পাকিস্তানে উড়াল দেয় এবং বড়দিনে বেসক্যাম্পে পৌঁছে যায়। সেখানে তাঁদের বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিল তীব্র তুষারপাত এবং প্রবল বাতাস। অভিযান শেষে দলের সদস্যরা জানান যে তাঁরা ৮০ দিন বেসক্যাম্পে অবস্থানকালে বড়জোড় দশটি পরিষ্কার দিন পেয়েছিলেন!

মাসিয়েজ পাওলিকোস্কি, মাসিয়েজ বেরবেকা, ক্রিস্টোফ উইলিকি এবং জন টিঙ্কার এই ঝড়ো হাওয়ার মধ্যেই ৫ই জানুয়ারী ক্যাম্প-১ স্থাপন করে ফেলেন ৬১০০ মিটার উচ্চতায়। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রথম শীতে এভারেস্টজয়ী জুটি উইলিকি এবং চিছে চিমনি পাড়ি দিয়ে ৬৭০০ মিটারে ক্যাম্প-২ স্থাপন করে ফেলেন। এরপরই দূর্ভাগ্য তাঁদের তাড়া করতে শুরু করে, শূরু হয় এক দীর্ঘসময়ের প্রতিকূল আবহাওয়া। অবস্থা এমনই খারাপ ছিল যে তাঁরা ৭৩০০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প-৩ স্থাপন করতে সময় লেগে যায় মার্চের ২ তারিখ পর্যন্ত । উইলিকি এবং চিছে প্রথম পৌঁছেন এবং ৬ তারিখে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন রজার মেয়ার, ইয়ান ফ্রাঙ্কস গেগ্নন। কিন্তু সেই রাতেই শুরু হয়ে যায় তীব্র তর্জন-গর্জন করা এক হ্যারিকেন। তাঁরা দু’জনেই মারাত্মকভাবে ফ্রস্টবাইট আক্রান্ত হন। তাঁদের অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে তাঁদের নামিয়ে আনতে উদ্বারাভিযান চালাতে হয়। এরপরই ওই অভিযান আর প্রলম্বিত না করার সিদ্বান্ত হয়। এই অভিযান বাতিলের পরপরই এই দলের কিছু সদস্য ব্রডপিকে এক আল্পাইন স্টাইল ক্লাইম্বিং এ অংশ নেন এবং মাসিয়েজ বেরবেকা ব্রডপিকের ফোরসামিটে পৌঁছাতে সক্ষম হন।

১৯৮৮ এর পর পোলিশদের মনোযোগ কে-২ থেকে সরে গিয়ে চলে যায় নাঙ্গা পর্বতের দিকে। তাঁরা বেশ কিছু অভিযানও চালান, যা ব্যার্থ হয়। কিন্তু কে-২ এর স্বপ্ন মাথা থেকে ফেলতে পারেননি যাওয়াদা। ২০০০ সালে তিনি চীনের দিক হতে দ্বিতীয়বারের মতো কে-২ অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ওই বছর ফেব্রুয়ারীতে তিনি পর্বতের উত্তরদিকটা নিরীক্ষায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তিনি অজানা কোন এক রোগে আক্রান্ত হয়ে কারাকোরাম যেতে পারেননি। দীর্ঘ ছয় মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০০০ সালের ২১ই আগস্ট কে-২ শীতকালীন সামিটের এই স্বপ্নদ্রষ্টা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

যাওয়াদা চলে গেলেও তাঁর অসমাপ্ত অভিযান থেমে থাকেনি। তাঁরই নেতৃত্বে গড়ে উঠা পর্বতারোহীরা তাঁর পরিকল্পনাকেই ২০০২ সালে বাস্তবে রুপ দান করেন। ক্রিস্টোফ উইলিকির নেতৃত্বে ১৯ জন আল্পাইনিস্ট এবং ১৪ জন সাপোর্ট স্টাফের একটা দল ডিসেম্বরে কারাকোরামে এসে পৌঁছান। নর্থ রিজ ধরে আরোহন করার উদ্দেশ্যে আসা এই অভিযানে ১৫ জন পোলিশ বাদেও ছিল উজবেকিস্তান (১), কাজাখস্তান (২) এবং জর্জিয়ার (১) এর অভিযাত্রী।   

polish-winter-expedition-to-k2-2002_3-czlonkowie-wyprawy-w-bazie

ছবিঃ ২০০২-০৩ সালের পোলিশ দল (সংগৃহীত)

দলটি ৩০ই ডিসেম্বর বেসক্যাম্পে পৌঁছেই রুট তৈরীর কাজে লেগে পরে। ৫ই জানুয়ারী ডেনিস উরুবকো এবং ভাসিলি পিভস্টোভ ৬০০০ মিটারে ক্যাম্প-১ স্থাপন করেন। খারাপ আবহাওয়ার জন্য এক বিরতির পর ক্যাম্প-২ তে যাবার পথ বানাতে একটা পাথুরে দেয়ালে ২০০ মিটার রোপ ফিক্স করেন উইলিকি এবং জ্যাক বেরবেকা।  পরে ২০ই জানুয়ারী ডেনিস এবং ভাসিলি ৬৭৫০ মিটারে ক্যাম্প-২ সেট করেন। অগ্রযাত্রা ঠিক থাকলেও সমস্যা বাঁধলো হলো অন্যত্র। পোলিশদের সাথে পুর্বের দেশের অভিযাত্রীদের মতের অমিল ঘটছিল প্রায়শ:ই। সমস্যা এমনই তীব্র আকার ধারন করে যে অন্য দেশগুলো হতে আসা চার অভিযাত্রীর তিনজন দলত্যাগ করে দেশে ফিরে যান। রয়ে যান শুধু কাজাখ ক্লাইম্বার ডেনিস উরুবকো। হয়তঃ পর্বতের প্রতি এই ভালোবাসার প্রতিদানই পেয়েছেন পরবর্তীতে উরুবকো। তাঁর নামের পাশে আজ মাকালু এবং গাসারব্রাম-২ এর মতো দুটি পর্বতে প্রথম শীতকালীন সামিটের কীর্তি। তিনি পৃথিবীর ১৪টি শীর্ষ শৃঙ্গ জয়ী ১৪ তম ব্যাক্তি এবং অক্সিজেন সাহায্য ছাড়া এই কীর্তি যারা করেছেন তাঁদের মধ্যে অষ্টম। ২০১৫ সালে তাঁকে পোলিশ সরকার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে।

তিনজন অভিযাত্রী চলে যাওয়ায় শক্তি কিছুটা খর্ব হলেও নর্থ রিজ ধরে অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। ফেব্রুয়ারীর ৪ তারিখে এবং ১২ তারিখে তাঁরা স্থাপন করে ফেলেন ৭৩০০ মিটারে ক্যাম্প-৩ এবং ৭৬৫০ মিটারে ক্যাম্প-৪। এরপর উড়ে এসে জুড়ে বসা খারাপ আবহাওয়ার একটা চক্র থেকে মুক্তি পেতেই তাঁরা ২১শে ফেব্রুয়ারী প্রথম সামিট পুশ শুরু করেন। জুরেখ নাটকানস্কি এবং জ্যাক জাউয়েন প্রথমে যাত্রা করেন। তাঁদের কাজ ছিল ক্যাম্পগুলো চেক করা এবং তাতে সাপ্লাই ঠিক আছে কিনা দেখা। পরদিন উরুবকো এবং কাজখান সামিট পুশ শুরু করেন। এই দুই অভিযাত্রী ২৫ই ফেব্রুয়ারী ক্যাম্প-৪ এ এসে দেখেন ক্যাম্পটি সম্পূর্ণ ধ্বসে গেছে। মাথা গুঁজার ঠাঁই টুকু হারিয়ে তাঁদের সাথে থাকা এক ছোট্ট বিভোয়াক টেন্টে তাঁরা এক ভয়ঙ্কর রাত্রি যাপন করেন। পরদিন সকালে উরুবকো খেয়াল করেন কাজখান সেরিব্রাল এডেমায় ভুগছেন। সাথে সাথে তাঁকে উরুবকো নামিয়ে আনতে শুরু করেন। ক্যাম্প-৩ তে উইলিকি গরম পানি এবং ঔষুধ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি সহ মিলে কাজখানকে উদ্বার করেন। ২৭ই ফেব্রুয়ারী সবাই বেসক্যাম্পে নেমে আসলে অভিযানের ইতি টানার কঠিন সিদ্বান্ত নেয়া হয়। শীশাপাংমায় প্রথম শীতকালীন সফলতার অধিকারী পিটার মোরস্কি এই অভিযানের রিপোর্টে লিখেন যদি  কে আরো একবার শীতে ফিরিয়ে দিয়েছেতবু এটা পরিষ্কার যে শীতে এই পর্বতে সফল হওয়া সম্ভব

K22002-03Route

ছবিঃ ২০০২-০৩ এর পোলিশ অভিযানের যাত্রাপথ (সংগৃহীত)

রাশিয়ার এক দুঃসাহসী পর্বতারোহীদের দল লোৎসে মিডল, এভারেস্ট নর্থফেস, কে-২ ওয়েস্টফেস এ বেশ কিছু নতুন রুটে সফল আরোহন করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের স্বপ্ন ছিল আরো বড় কিছু করার – শীতকালে কে-২ ছোঁয়ার। যেই ভাবা সেই কাজ। পরিকল্পনা করে ফেললেন ২০১১-১২ এর শীতে আবরুজ্জী রিজ রুট দিয়ে এই পর্বত আরোহনের। ভিক্টর কজলভ এর নেতৃত্বে ১৭ জনের দল নিয়ে ২০১১ এর ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ তাঁরা পৌঁছালেন বেসক্যাম্পে।

শুরুতেই  ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে অভিযাত্রীরা রুট ঠিক করতে শুরু করেন। খুব দ্রুতই তাঁরা জানুয়ারীর ৪ তারিখ ৬০৫০ মিটারে ক্যাম্প-১ এবং ১৪ তারিখ ৬৩৫০ মিটারে ক্যাম্প-২ স্থাপন করেন। এরপরই খারাপ আবহাওয়া শুরু হওয়াতে অভিযাত্রীরা বেসক্যাম্পে আটকা পরেন। অবশেষে আকাশ একটু পরিষ্কার হলে জানুয়ারীর ২৫ তারিখ তাঁরা ক্যাম্প-২ এর  উপরে কাজ শুরু করে দেন এবং জানুয়ারীর শেষ নাগাদ তাঁরা ৭০০০ মিটার পর্যন্ত রোপ ফিক্স করতে সক্ষম হয়। নিক, ভ্যালেরি এবং ভিটালি ৭০০০ মিটারে কিছু রসদ নিয়ে যান। তাঁদের পিছু পিছু উঠে আসেন ইলজাস, এন্ড্রু এবং ভাদিম, যারা ৭২০০ মিটার পর্যন্ত রোপ ফিক্স করে ফেলেন। এমন অগ্রযাত্রায় ভিলেন হয়ে বাঁধা দিতে ফেব্রুয়ারীর ২য় দিন শুরু হয় হ্যারিকেন ঝড় এবং সবাই নিচে নেমে যেতে বাধ্য হন।

দূর্ভোগের তখনও মাত্র শুরু। আরোহনের সময় ভিটালি মারাত্মকভাবে ফ্রস্টবাইটে আক্রান্ত হোন এবং তার উপর তাঁকে পেয়ে বসে নিওমোনিয়া। দলের সদস্যরা জরুরী হেলিকপ্টার রেস্কিউ এর জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু আবহাওয়া এতো প্রতিকূল ছিলো যে হেলিকপ্টারও বেসক্যাম্পে আসা অসম্ভব হয়ে পরে। অবশেষে ৬ই ফেব্রুয়ারী বেলা ১১.৩০ এর দিকে নিওমোনিয়া এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভিটালি মৃত্যুবরণ করেন। সঙ্গীর এই দূর্ভাগ্যজনক পরিণতির কারনে এই অভিযানের এখানেই সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।

২০১৪-১৫ মৌসুমে ডেনিস উরুবকোর নেতৃত্বে একটি দল চীনের দিকে নর্থ-ইস্ট রিজের এক আনক্লাইম্বড রূটে আরোহনের পরিকল্পনা করলেও চীনে অনুমতি সংক্রান্ত প্রশাসনিক জটিলতার কারনে সে অভিযান ভেস্তে যায়। দলে আরও ছিলেন এডাম বিয়েলিকি এবং এলেক্স জিকন।

২০১৫-১৬ সালে প্রথম শীতকালীন নাঙ্গা পর্বত সামিটের সফলতার পরপরই আসে কিংবদন্তি ক্রিস্টোফ উইলিকির নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ মৌসুমে পোলিশদের শীতকালীন কে-২ অভিযানের ঘোষণা, যিনি ৪ অভিযানে মিলে কে-২ তাই কাটিয়েছেন জীবনের ১৪টি মাস। কিন্ত সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় এই অভিযানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন জোগাড় করতে কিছুটা দেরী হয়ে যায় পোলিশদের। বাকি সময় সকল রসদ জোগাড় করে ওই মৌসুমে অভিযানের জন্য যথেষ্ট ছিলোনা। তাই উইলিকি অভিযান এক বছর বিলম্বে ২০১৭-১৮ মৌসুমে পরিচালনার সিদ্বান্ত নেন। অনেকদিন পর এটি একটা জাতীয় অভিযান।

26114268_748572762018339_2740097311856252097_n

ছবিঃ এই অভিযানের পোলিশ দল (সংগৃহীত)

উইলিকির মূল পরিকল্পনা হলো বিশাল বহর নিয়ে যাবেন, যার একাংশ থাকবে পথ তৈরির কাজে, বাকি অংশ থাকবে সামিট দলে। চীন সরকারের অনিশ্চিত সিদ্বান্ত এড়াতে তিনি বেছে নিয়েছেন দক্ষিণ দিক, অর্থাৎ পাকিস্তানের দিক। রুট এখনো ঠিক করেননি। চেজেন রুট তথা বস্কো রূট বেছে নেয়ার সম্ভাবনা প্রবল। শীতকালীন পর্বতারোহণের ইতিহাসে শেষ পৃষ্ঠাঙ্কন করতে চাওয়া দলে ক্রিস্টোফ উইলিকি বেসক্যাম্পে দল পরিচালনায় থাকলেও আরোহীদের মধ্যে থাকছে বেশ কিছু সুপরিচিত নাম। এই দলের ৫জন ইতিমধ্যেই কে-২ সামিট করেছেন এবং আরো ২ জন সামিটের প্রায় কাছাকাছি থেকে ফিরেছেন। দলের শীর্ষে থাকছেন শীতকেই বশ মানানো কে-২তে এযাবৎ শীতকালে সর্বোচ্চ উচ্চতায় যাওয়া ডেনিস উরুবকো, গাসারব্রাম-১ এবং ব্রডপিকে প্রথম শীতকালীন সামিটের নায়ক এডাম বিয়েলেকি, গাসারব্রাম-১ সামিটে বিয়েলেকির সাথী জানুশ গোলাব, ব্রডপিক সামিট শেষে বিয়েলেকির সাথে ফিরে আসা একমাত্র সঙ্গী আর্থার মালেক, অর্ধডজন শীতকালীন অভিযান করা আলোকচিত্রশিল্পী ডারিউশ জালুস্কি এবং হিমালয় ও শীতকালীন অভিযানে অভিজ্ঞ ক্রিস্টোফ রানীশ, মারেকে মিয়ালারাস্কি, রাফাল ফ্রনিয়া,  মার্সিন কাজখান, এবং পিটার টমালা। এরা ছাড়াও অভিযানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছেন সুখ্যাত স্কিয়ার আন্দ্রেই বারগিয়েল। উরুবকো এই অভিযান নিয়ে বলেন “ক্রিস্টোফ সবসময় আমার পর্বতারোহণের আইডল ছিলেন এবং আমাদের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযান আয়োজনে তাঁর বেশ ভালো পরিকল্পনা আছে। তিনি অত্যন্ত বুদ্বিমান এবং অভিজ্ঞ। আমি তাঁকে চোখ বন্দ্ব রেখেই বিশ্বাস করি। আমি তাঁকে অনুসরণ করবো এবং তাঁর যেকোন সিদ্বান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত।”

ভবিষৎই বলে দিবে কে করবে পর্বতারোহনের এই শেষ বৃহৎ সমস্যার সমাধান, কে এই অবাধ্যকে করতে পারবে বাধ্য, কে ঘটাতে পারবে কে-২ এর এই একাকী প্রতীক্ষার অবসান।

About Author

Rashik Hafiz

Rashik is a passionate mountaineer, trekker, and expedition enthusiast, always seeking new adventures in the great outdoors

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts

Recent Posts

Categories