April 17, 2025 9:10 pm
April 17, 2025 9:10 pm

১৯২১ এ এভারেস্ট

শতবর্ষ আগে, ১৯২১ সালের ১৮ই মে, তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার দার্জিলিং থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দূরে পৃথিবীর চূড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে প্রথম ব্রিটিশ নিরীক্ষা অভিযান। সেই থেকে শুরু এভারেস্ট অভিযানের ইতিহাস।

পশ্চিমা গবেষকেরা ৭০বছর আগেই পৃথিবীর শীর্ষবিন্দু হিসেবে এভারেস্টের অস্তিত্বের কথা জানলেও ১৯২১ এ, এভারেস্টের সান্নিধ্যে যেতে, শীর্ষে যাবার সম্ভাব্য পথ খুঁজতে এবং সম্ভব হলে প্রথমবার আরোহন করতে আয়োজিত হয় এই প্রথম অভিযান। এই অভিযানের আগে, কোন বিদেশী অভিযাত্রী পর্বতের প্রায় শত কিলোমিটারের মধ্যেও আসতে পারেননি (ইতিপূর্বে কাছে যাওয়া দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার)! সেসময় নেপালে বিদেশীরা প্রবেশ করতে পারতোনা। তাই এভারেস্টের কাছে যাবার একমাত্র পথ ছিলো উত্তরে, তিব্বতের দিক থেকে।

রংবুক থেকে দেখা এভারেস্ট। ছবিঃ জর্জ মেলোরী।

এভারেস্ট সংলগ্ন এলাকা ও সেখানের হিমবাহগুলো এর আগে ছিলো বিদেশীদের জন্য সম্পূর্ণ অচেনা জগৎ। তাঁদের কাছে রংবুক হিমবাহের কোন মানচিত্র ছিলোনা। তাই তাঁরা পূর্ব রংবুক হিমবাহ মূল রংবুকের সাথে না মিলে আরো পূর্ব দিকে চলে গেছে ভেবে ভূল করেছিলেন। এই অজ্ঞতার কারনে অভিযানটি প্রথমে মূল রংবুকে উত্তর দিক দিয়ে প্রবেশ করে এবং ধরে নেয় যে এই হিমবাহ দিয়ে শীর্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। অভিযাত্রীরা দেরীতে তাঁদের ভূল বুঝতে পেরে লাকপা লা আরোহন করে আবারো নেমে আসেন পূর্ব রংবুকে। এরপর আবার চড়তে শুরু করেন নর্থ কোলে, যাতে নষ্ট হয় অনেক বেশী মূল্যবান সময়।

রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি ও ব্রিটিশ আল্পাইন ক্লাব আয়োজিত এই অভিযানে দলনেতা চার্লস হাওয়ার্ড-বুরি বাদেও মূল অভিযানে ছিলেন আরো ৮ জন। আরোহণকারী দলে ছিলেন হেরল্ড রেইবার্ন, আলেক্সান্ডার মিশেল কেলাস এর মতো অভিজ্ঞদের পাশাপাশি জর্জ হার্বার্ট লেই মেলোরী এবং গাই বুলকের মতো তরুণও। আরোহীরা বাদেও অভিযানে ছিলেন ডাক্তার ও প্রকৃতিবিদ স্যান্ডি ওলাস্টন, ভূবিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার ম্যাকমিলান হেরন এবং সেনাবাহিনীর দুই সার্ভেয়ার হেনরি রেইজ মোরশাইড এবং এডওয়ার্ড অলিভার হুইলার।

১৯২১ এর দল। দাঁড়িয়েঃ ওলাস্টন, হাওয়ার্ড-বুরি, হেরোন, রেইবার্ন। বসেঃ মেলোরী, হুইলার, বুলোক, মোরশাইড।

তাঁদের পথ এগিয়ে গিয়েছিলো তিস্তা নদীর উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে সিকিমের জেলেপ-লা (Jelep La) হয়ে তিব্বতে গিয়ে ৪৪০০ মিটারের ফারি (Phari) পেরিয়ে শুম্বি (Chumbi) উপত্যকাতে। এরপর থাং-লাতে (Tang La) হিমালয়ের জাল বিভাজিকা পেরিয়ে তিব্বতের মালভূমিতে। অভিযান এগিয়ে চলার সাথে সাথেই আবহাওয়া চারপাশে ঘন সবুজ, গরম ও আর্দ্র থেকে ভারীবর্ষণ থেকে পরিবর্তিত হয় ঠান্ডা, শুষ্ক এবং তীব্র বাতাসে।

ফারিতে মেলোরী ও বুলোক। ছবিঃ হাওয়ার্ড-বুরি

ম্যালোরি এবং হাওয়ার্ড-বুরি একে অপরকে অপছন্দ করতেন। ম্যালোরি হাওয়ার্ড-বুরি সম্পর্কে লিখেছিলেন “তীব্র দাম্ভিক জমিদার, রক্ষণশীল সংস্কারে ভোগা একজন যে নিজেকে ছাড়া সবাইকেই ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য করেন।”

লাসার মূল রাস্তা ছেড়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে অভিযান পৌঁছায় খাম্বা-জং (Khamba Dzong) গ্রামে। ৬ই জুন এখানে কেলাস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং রেইবার্ন অসুস্থ হয়ে সিকিমে ফিরে যান। বাকী দল আরো পশ্চিমে সরে গিয়ে অরুণ নদী ধরে পৌঁছান শিলিং (Shiling) গ্রামে। এই গ্রাম থেকে টোপোগ্রাফিক সার্ভে করার মতোই স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান এভারেস্ট,  যা আবার পরবর্তী অনেকটা পথ জুড়েই লুকিয়ে যায় অন্যান্য পর্বতের আড়ালে। শেকার-জং (Shekar Dzong) পেরিয়ে তাঁরা টিংরি-জং (Tingri Dzong) পৌঁছে অভিযানের উত্তর দিকের অংশের জন্য একটা গবেষণা বেইজ স্থাপন করেন।

২৩ই জুন মেলোরী ও বুলক ১৬ জন শেরপা ও পোর্টার নিয়ে দক্ষিণ দিকে বেরিয়ে পরেন। দুইদিন পর তাঁরা পৌঁছে যান রংবুক উপত্যকার প্রবেশমুখে যেখান থেকে আবারো দৃশ্যমান এভারেস্ট চূড়া। আরো ১৬ কিলোমিটার পর তাঁরা রংবুক হিমবাহের শৈলশিরার পাশে থেমে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটার উচ্চতায় বেসক্যাম্প স্থাপন করেন, যার খুব কাছেই ছিলো রংবুক মনেস্ট্রি।

বেসক্যাম্প থেকে হিমবাহে প্রথম আক্রমণ তেমন একটা সফল হয়নি। শুধু আল্পসের হিমবাহের সাথে পরিচিত এই ইউরোপীয় আরোহীরা পশ্চিম রংবুকের প্রান্তে ৫৬০০ মিটার উচ্চতায় এক ১৫ মিটারের সিরাক কোনমতে অতিক্রম করে ফিরে আসেন বেসক্যাম্পে (বর্তমানে বৈশ্বিক  আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে হিমবাহ সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় ওই স্থানে এমন কোন বাঁধা আর নেই।)

৬দিন বিশ্রাম ও অভিযোজিত হবার পর তাঁরা ৫৩০০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প-২ স্থাপন করেন। ১লা জুলাই, মেলোরী ৫জন শেরপাকে সাথে নিয়ে নর্থ ফেসের কাছে হিমবাহের প্রান্তে চলে যান। সেখানে ৫৮০০ মিটার উচ্চতায় তিনি নর্থ কোলের পশ্চিম ঢাল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন আরোহন উপযোগী পথ খুঁজে পেতে। কিন্তু সম্ভাব্য কোন পথেই সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে মেলোরী পশ্চিম রংবুকে সরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

যতোই পশ্চিমদিকে সরে যাচ্ছিলেন ততোই তাঁদের জন্য পথ খোঁজা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো।  তবে সেদিক থেকে নর্থ ফেইসের উপরের দিকের অংশ, নর্থ কোলের উপর নর্থ রিজ পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলেন ওই পথে চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন রংবুক থেকে নর্থ কোলের পূর্বদিকে এগিয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই, যা ছিলো আসলে ভূল ধারণা। পূর্বদিক থেকে নর্থকোল ধরে আরোহনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া না দিলেও উপযুক্ত পথ খুঁজে না পেয়ে তাঁরা ২০শে জুলাই ওই ক্যাম্প ত্যাগ করেন।

শেরপাদের সাথে স্নো-বুট পরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বুলোক।

এদিকে হাওয়ার্ড-বুরি এভারেস্টের পূর্ব দিকে চষে বেড়ান অভিযানের পরবর্তী ধাপের জন্য উপযুক্ত বেসক্যাম্প খুঁজে বের করতে। অরুণ নদীর উপশাখা অতিক্রম করতে ব্যার্থ হয়ে তিনি খার্তে (Kharta) জেলায় পৌঁছান যেখানে স্থানীয় লোকরাও জানতেন না কোথা হতে এসেছে এই নদী। যেহেতু এই নদী হিমবাহ সৃষ্ট হাওয়ার্ড-বুরির ধারণা হলো এভারেস্ট থেকেই এর উৎপত্তি। তাই পূর্বদিকে অভিযানের জন্য তিনি এখানেই বেসক্যাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৯শে জুলাই সবাইকে এখানে সরিয়ে আনেন।

মেলোরী ও বুলক এর ধারণা হলো খার্তে নদীর উৎস হলো নর্থ কোল। তাই ২রা আগস্ট তাঁরা নদীর উৎস খুঁজতে বের হলেন। পরদিন স্থানীয়রা জানালেন এভারেস্ট থেকে প্রবাহিত হয়ে আসছে আরেকটি নদী। তাই তাঁরা ৫৫০০ মিটার উচ্চতার লাংমা-লা পাড়ি দিয়ে খার্তে নদীর দক্ষিণে সমান্তরালে বয়ে চলা কামা (Kama) নদীর প্রবাহ ধরে এগিয়ে চললেন।

তাঁরা কিছুটা দক্ষিণে সরে এসে পৌঁছে গেলেন মাকালুর কাছাকাছি। সেখান থেকে তাঁরা কাংশুং (Kangshung) হিমবাহের দিকে এগিয়ে দেখতে পেলেন লোৎসে, এভারেস্ট এবং কাংশুং ফেইস। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ মেলোরী লিখেছিলেন “আমি এতোদিন যে সুন্দর ও আকর্ষণীয় পর্বতের দৃশ্য দেখেছি তা শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আরো সুন্দর হতে পারতো। কিন্ত এখানে যেনো সব তুলির আঁচড় যেনো পরে গেছে এরই মাঝেই।”

কাংশুং দেয়াল দেখে মেলোরী ও বুলক ধরে নিয়েছিলেন এটি আরোহন অসম্ভব। মেলোরী লিখেছিলেন “অন্য কোন ব্যক্তি, কম বিজ্ঞ কেউ, এই পথে চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু এটি আমাদের জন্য নয়।” কাংশুং ফেইস প্রথম সফলভাবে আরোহন সম্ভব হয় ১৯৮৩ সালে।

উপত্যকায় ফেরার পথে তাঁরা ৭ই আগস্ট ৬৫২০ মিটার উচ্চতার এক পর্বত চূড়ায় উঠলেন নর্থ কোল ও কাংশুং ফেইস ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে। সেখান থেকে তাঁরা দেখতে পেলেন এভারেস্টের উত্তর-পূর্ব দেয়াল যা দেখেই মনে হলো আরোহন হবে দুঃসাধ্য। সাথে এটাও বুঝতে পারলেন  নর্থ কোল দিয়ে উঠে নর্থ রিজ ধরে উঠে যাওয়াই হলো সম্ভাব্য উপযুক্ত পথ। তাঁরা আসলেই ভূল করেননি। এই উত্তর-পূর্ব দেয়াল প্রথম আরোহন সম্ভব হয় ১৯৯৫ সালে!

লাকপা-লা থেকে নর্থ কোল। ছবিঃ হাওয়ার্ড-বুরি।

মেলোরী অসুস্থ বোধ করলে ১৩ই আগস্ট বুলক একাই হিমবাহ ধরে পর্যবেক্ষণের জন্য আরো পশ্চিম দিকে সরে যান। এখানেই তিনি বুঝতে পারেন নর্থ কোল দিয়ে এগিয়ে যাবার আসল পথ রংবুক হিমবাহ দিয়েই। কিন্তু সময়ের অভাবে সিদ্ধান্ত হয় সামনে থাকা পাস অতিক্রম করেই তাঁরা এগিয়ে যাবেন। বিরুপ আবহাওয়ায় অপরিচিত হিমবাহ ধরেই অভিযান ১৮ই আগস্ট পৌঁছে যান ৬৮০০ মিটার উচ্চতার লাকপা-লা (Lhakpa La) তে। এরপর মেলোরী সিদ্ধান্ত নিলেন এভারেস্ট আরোহনের উপযুক্ত পথ খুঁজে পাওয়া গেছে এবং অন্যরাও একমত হলেন যে গবেষণা সম্পূর্ণ হয়েছে, এবার আসল কাজের সময়। সবাই বেসক্যাম্পে ফিরে ১০ দিন বিশ্রাম নিলেন।

মেলোরী ও বুলক বিশ্রাম নেয়ার সময়েই দলের অন্যরা খার্তে হিমবাহের ৫৩০০ মিটারে অগ্রবর্তী ক্যাম্প, ৬১০০ মিটারে ক্যাম্প-২ স্থাপন করে ফেললেন। পরিকল্পনা ছিলো লাকপা-লা’তে ক্যাম্প-৩, নর্থ কোলে ক্যাম্প-৪ ও সামিটের আগে আরেকটি ক্যাম্প স্থাপন করবেন। কিন্তু আদতে দেখা গেলো অভিযাত্রীরা এই জটিল কাজকে অনেক সহজ ভেবেছিলেন।

মৌসুমী বৃষ্টি শেষ হবার জন্য অপেক্ষায় থেকে অবশেষে ৩১শে আগস্ট তাঁরা অগ্রবর্তী বেসক্যাম্পে সরে এলেন। সেখানে তাঁদের সাথে যুক্ত হলেন অসুস্থ হয়ে আগে সিকিম ফিরে যাওয়া রেইবার্ন।  সেখানে ভালো আবহাওয়ার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হলো ২০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর মেলোরী, বুলোক, মোরশেয়াড ও হোয়েলার সেই ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে লাকপা-লা পৌঁছালেন।

তাঁরা বুঝতে পারলেন একটি অন্তর্বর্তী ক্যাম্প ছাড়া সরাসরি নর্থ কোলে উঠা অসম্ভব। তাই তাঁরা রসদের জন্য ক্যাম্প-২ এ নেমে এলেন। সেখান থেকে রেইবার্ন ছাড়া ২৬ শেরপাসহ পুরো দল বেরিয়ে পরলেন ক্যাম্প স্থাপনে। পরদিন ভোরে মেলোরী, বুলোক, হোয়েলার ও ১০শেরপা পূর্ব রংবুকে নেমে এলেন এবং বাকীরা এগিয়ে গেলেন। হিমবাহে এক কঠিন রাত্রি পাড়ি দিয়ে ২৪শে সেপ্টেম্বর তাঁরা দেখলেন অগ্রবর্তী দল নর্থ কোলে পৌঁছে গেছে কিন্তু তাঁদের সাথে কোন রসদ নেই। নর্থ কোলের এলাকা ক্যাম্প স্থাপনের উপযোগী হলেও সেখানে বইতে থাকা তীব্র বাতাস আরো এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব করে দিলো। তাই তাঁরা আবারো হিমবাহে নেমে এলেন।

নর্থ কোলের চারপাশের ডায়াগ্রাম।

মেলোরী ও বুলক বুঝতে পারলেন তাঁরা নর্থ কোলে ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না, অথবা ৭০০০ মিটারের উপরে উন্মুক্ত স্থানে রাতও কাটাতে পারবেন না। এদিকে আবহাওয়া খারাপ হতে হতে এক ঝড় উঠলো। ২৫শে সেপ্টেম্বর তাঁরা আবারো লাকপা-লা আরোহন করে ২৬শে সেপ্টেম্বর  পুরো দলই উপরের ক্যাম্প গুলো গুটিয়ে নেমে কার্থে নদীর ধারে নেমে এলেন এবং ২৫শে অক্টোবর নিরাপদে দার্জিলিং পৌঁছালেন। এই প্রথম এভারেস্ট অভিযানে আরোহন করা শীর্ষবিন্দু ৭০০৫ মিটার।

এই অনুসন্ধানী অভিযান তিব্বত ত্যাগের আগেই “এভারেস্ট কমিটি” সিদ্ধান্ত নেয় ১৯২২ সালেই জেনারেল ব্রুসের নেতৃত্বে আরোহনের জন্য পরিচালিত হবে অভিযান। অভিযাত্রীরা এইবার অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে চেষ্টা করবে অসমাপ্ত পথ সমাপ্ত করতে।

রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি ও আল্পাইন ক্লাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সর্বসাধারণের ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে ১৯২১ এর এই ব্রিটিশ অভিযান। হাওয়ার্ড-বুরি রাতারাতি তারকা খ্যাতি পেয়ে যান ও অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য পেয়ে যান রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটির স্বর্ণ পদক।

১৯২২ সালের অভিযান সফলতা লাভ করেনি।  প্রথম দুইটি চেষ্টায় ব্যর্থতার পর তৃতীয় চেষ্টার পরিণতি হয় মর্মান্তিক। এক তুষারধ্বসের কবলে পরে মৃত্যুবরণ করেন ৭জন নেপালি শেরপা। এভারেস্ট আরোহনের চেষ্টায় এটাই প্রথম প্রাণ হারানোর ঘটনা। দ্বিতীয় চেষ্টায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৩২৬ মিটার উচ্চতায় উঠে অভিযানটি প্রথম ৮০০০মিটার উচ্চতা অতিক্রমের কীর্তি গড়ে।

১৯২৪ সালের অভিযানটি তিন ধফা চেষ্টা করে সামিটে পৌঁছানোর। প্রথম দুটি ব্যার্থ হলেও এডওয়ার্ড নর্টন ৮৫৭০ মিটার উচ্চতায় উঠে নতুন রেকর্ড গড়েন। তৃতীয় প্রচেষ্ঠায় হারিয়ে যান জর্জ মেলোরী ও এন্ড্রু আরভিন। মেলোরীর মৃতদেহ ১৯৯৯ সালে খুঁজে পাওয়া গেলেও আজো খোঁজ মিলেনি আরভিনের। তাঁরা কতো উচ্চতায় উঠেছিলেন, কেউ কি সামিটে পৌঁছাতে পেরেছিলেন, নাকী সামিটে পৌঁছানোর আগেই দুইজনই মৃত্যুবরণ করেন, এটা নিয়ে আজো বিতর্ক বিদ্যমান।

১৯৫৩ সালের ২৯শে মে এডমুন্ড হিলারী ও তেনজিং নরগে প্রথম এভারেস্ট আরোহনে সফল হলেও এই সফলতা আসে নেপালের দিক থেকে। আর ১৯২১ এর প্রথম অভিযানে ব্রিটিশদের খুঁজে পাওয়া পথে প্রথম সফলতা (বিতর্কিত) আসে ১৯৬০ সালের ২৫শে মে চীনের পর্বতারোহী ওয়ানহ ফু-চৌ, কু ইন-হুয়া এবং গোনপো এর হাত ধরে।।

তথ্যসূত্রঃ
||উইকিপিডিয়া
||আল্পাইন জার্নাল ১৯৬২

About Author

Forhan Zaman

আমি ফরহান – ফরহান জামান। চট্টগ্রামে জন্ম, চট্টগ্রামেই বেড়ে উঠা। আজন্ম বিশ্বাস যে পাহাড়েই বাহার। পেশাগত জীবনে ব্যাংকার হলেও পাহাড়ে পাহাড়েই ঘুরি, পাহাড়ের খবর পড়ি, পাহাড় ভালবাসি। আর ভাল লাগে নিজের সেই ভালবাসার রঙে অন্যকে রাঙাতে দেখতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts

Recent Posts

Categories